PKC স্যারের জন্য একটি লাল গোলাপ


২০১৮ সালের দ্বিতীয় দিনটি বাঙলা ভাষার জন্য মন খারাপের দিন, গত রাতে বিদায় নিলেন PKC স্যারবাঙলা ভাষা হারাল তার এক প্রেমিককে আর তার ছাত্ররা, এমন এক শিক্ষককে যিনি শিক্ষকের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের বন্ধু হতে পরেছিলেন সহজেই হয়তো সময়ের কিছুটা আগেই বিদায় নিলেন নিউ আলিপুর মাল্টিপারপাস বিদ্যালয়ের সাবেক বাঙলা ভাষা শিক্ষক সকলের প্রিয় PKC , প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী স্যারশুধু বাঙলা ভাষার শিক্ষক বললে নেহাতই ধৃষ্টতা হবে, তিনি বাঙলা ভাষার প্রেমিকযার হাতের ছোঁয়ায়, উচ্চারিত শব্দে ভাষা কখনও ঈষৎ রাঙা হতো পূর্বরাগে আবার কখন প্রাচীন গুপ্ত গৃহ থেকে গর্জন করে  বেড়িয়ে আসে চর্যাপদের ছন্দ সাযুজ্যেকখনও পদাবলীর সনাতন লালিত্য কখনও রবি ঠাকুরের বিশ্ব চেতনা, তাঁর কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হতো মন্ত্রের মতো

যে মন্ত্রে একটা নেশা ছিল আর সেই নেশা কখন যে তার অনেক ছাত্রের মতো আমাকেও পেয়ে বসেছিল কে জানেবাঙলা সাহিত্যের দিকপালরা যদি আমার মতো অসংখ্যকে লিখতে বা সাহিত্য চর্চায়ে উৎসাহিত করে তবে PKC স্যার এগিয়ে যাওয়ার সাহস যুগিয়েছিলব্যক্তি জীবনে এমন সদা চনমনে মানুষটি কোন দিন নিশ্চুপ হয়ে যাবেন সেটা ভাবতেই পারিনিকিন্তু 'মৃত্যু' নামের চিরন্তন সত্যের মুখোমুখি সকলকেই দাঁড়াতে হয় একদিন, আগে অথবা পরে

ছাত্র হিসেবে তাকে কাছ থেকে দেখছি অনেকগুলি বছরপড়ানোর সাথে সাথে কি ভাবে যেন তিনি ভাষার প্রতি একটা আবেগ তৈরি করে দিয়েছিলেনউদাত্ত কণ্ঠের অধিকারী সুদর্শন এই মানুষটির শব্দ চয়নের ক্ষমতা বারেবারে বিস্মিত করতোভাষার প্রসাদ গুন কাকে বলে সেই সংজ্ঞা সেদিন জানা ছিল না, কিন্তু যেদিন ভাষার প্রসাদ গুন কাকে বলে জানলাম সেদিন প্রথম যার মুখ মনে পড়েছিল তিনি PKC স্যার

যারা তার ছাতার তলায় শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন তারা জানেন, উৎসাহের নিরিখে এই মানুষটিকে তুলনা পাওয়া দুষ্করসাম্য দর্শন এই মানুষটির হাতেই ভিত্তি প্রস্থ স্থাপন হয়েছিল পরবর্তী সময়ে স্কুল ক্রিকেটে সাড়া জাগানো স্কুল ক্রিকেট দলটিরসঙ্গে নাটক, গান, কুইজ সব কিছুতেই উৎসাহ ছিল মানুষটির

বিদায় চির সত্য  কিন্তু কোন কোন বিদায় রেখে যায় স্থায়ী পদচিহ্নPKC স্যার ততদিন বেঁচে থাকবেন যতদিন তার ছাত্ররা বাঙলা লিখবে, PKC স্যার ততদিন বেঁচে থাকবেন যতদিন তার কোন ছাত্র অন্য কাউকে বাঙলা শেখাবে, কিংবা তাদের উত্তরসূরিদের মধ্যেওআসলে শিক্ষকরা অমর, তারা জেগে থাকেন ছাত্রদের মধ্যেএই সদা জাগ্রত শিক্ষাব্রতীর শেষ যাত্রায় তাই শুধু মাত্র শোকের সাদা ফুল নয় তাঁর পায়ে রইল একটি লাল গোলাপ