স্পর্ধাহীন চাকতি
তার চাকতিতে জং পরেছে, হাঁটুতে গেঁটে বাত
কানে হীন হয়ে আসে শব্দরা
অতপর শহুরে যানজট......
পুরাণ থেকে মাটিতে নামে হস্তিনাপুর
পথে পথে দৌপদীর কানফাটা চিৎকার
স্পর্ধাহীন চাকতিতে জমেছে ক্লেদ
চলতে চলতে থেমে যায় বারবার ।
আর্তনাদে থমকে সমুদ্র, মুখ ঢাকে কালো মেঘ
তিনি চিরকাল নিরপেক্ষই থাকেন
ভোটাভুটি মেনে হয়
দুঃশাসনের অভিষেক।
দৌপদীদের রক্তে ভাসে গন্ত্রাতিক রাত
ভেসে যায় পুরাকথা, আলৌকিক রাজপথ
জং ধরা চাকতি আর নৈবিদ্য সাজান ফুটপাত।
ক্লান্তিঘুম
সিন্ধ চাঁদ ঠুকরে খায় কিছু ভিনদেশি ছায়া
বন্ধ বাজারের ফুটপাত, কলতলা আর পিচ রাস্তায়
ছিটকে পড়ে উচ্ছিষ্ট জ্যোস্না , মধ্যরাতের সভ্য শহরে।
জোয়ালের সাক্ষী হাতে টানা ঠেলাগাড়িগুলির ক্লান্তিঘুম
স্বপ্ন দেখায়, যদিও মজুরির শর্তে চুরি গেছে বাঁচার সময়।
পিরামিডের নীরবতা, যুগান্ত পেরিয়েছে সভ্যতা
সকালে বিকেলে কানে শুধুই লাজুক আপোষ মন্ত্র।
নগ্ন, গনতন্ত্রের এবার চামড়ায়
আঁচড় পড়েছে
ভরসা শুধুই শীর্ষাসন।
ভাগার উজাড় করে স্বচ্ছ হচ্ছে দেশ, বস্তি উজাড় করে রাষ্ট্র
শুধু দৃষ্টিকোণ অস্বচ্ছ হচ্ছে, বাষ্প হয়ে যাচ্ছে সমস্ত
বর্ষা
ঠেলাগাড়িগুলির ক্লান্তিঘুম রোজ রাতে শুধুই হিসেব করে
কতটা মজুরি চুরি হলেও মজুরেরা টিকে থাকবে ধুঁকে ধুঁকে।
খামালী
নদীতে স্রোত ভাঙে যাদের দুহাত
যাদের ঘামে নোনা সমুদ্রে ওঠে ঢেউ
বাণিজ্য বুকে বন্দরে থামে ডিঙ্গা
মাঝিদের নাম মনেও রাখে না কেউ।
খামালীর ঘরে মাটিতেল পুড়ে কালি
অন্ধকারেও জেগে থাকে মৃত মুখ
না খেতে পাওয়া পেটগুলো সব জানে
কারা চুরি করে ওদের ঘরের সুখ।
খামালী শ্রমিক হেলাল মরেছে কাজে
ঘরে ওর ছেলে এবং বিধবা বউ
ভয়ে ভয়ে থাকে হেলালের চালা ঘর
পাছে উঁকি মারে মালিকের
পোষা ফেউ।
হেলালকে কি শ্রমিক নেতারা চেনে?
যারা বকে চলে দিনরাত
ছাইপাঁশ
নিরাপত্তায় কিছুটা আপস ছিল
নদী নেয় দায়, ভাসে হেলালের লাশ
হে মার্কেটে হেলালও সেদিন ছিল
অন্য পোশাকে কিংবা অন্য নামে
রক্ত সেদিন মাটিকে ভিজিয়ে ছিল
যেমন ভেজে রোজ শ্রমিকের ঘামে।
না হয় চেনে না হেলালকে শ্রমিক নেতারা
যেমন চেনে না তোমায় এবং আমায়
খিদের দাবিটা সেখানে অসভ্যতা
রাষ্ট্র যেখানে নাচে
নামাবলি গায়ে।
আমারা ভুলিনি হেলাল কিংবা হারুকে
হে মার্কেটের রক্ত আমারও গায়ে
রক্তে ভেজা হেলালের জামাটাকে
মে দিবস তার পতাকা বানিয়ে নেয়।
জলপাই পাতা ছাপ
নাম শুনেছে সে, ওরা খাবার পাঠায়।
মৃত সভ্যতা আর যুদ্ধ গন্ধে ভেসেছে দেশ ।
নতুন ভাষা, নতুন শহর, পরিচয় ‘রিফিউজি’।
পুড়ে যাওয়া গ্রামটা আজও ভেসে ওঠে চোখের পাতায়
নাম শুনেছে সে, ওরা খাবার পাঠায়
জলপাই পাতা ছাপা প্যাকেটে কেক, বিস্কুট।
অনেক দিন পর রান্না হয়েছিল সেদিন
রুটি, ডাল, মাকদুস, কাবাব.....
সবাই লুকলো জলপাই বাগানে
বিমান গর্জনে কাঁপছিল বাড়ি
বোমাটা পরেছিল উনুনের উপরেই।
নাম শুনেছে শিশুটি, ওরা খাবার পাঠায়
প্যাকেটের উপর থাকে জাতি সংঘের ছাপ।
অথচ এখন কাজের সময়
স্টেশনটা কয়েক বছরে মাঠ হয়ে গেল
তারপর আগাছার জঙ্গল।
চামচিকে আর মরচে ধরা স্লোগান
দখল করেছে টিকিট ঘর,
অথচ, এখন
কাজের সময়।
জোয়াল টানা হাতগুলি
ক্যাকটাস হয়ে গেল
সেরামিকের টবে, উঁচু বাড়িগুলির ঝুলন্ত বাগানে।
রান্নাঘরে তখনও বাজত জলতরঙ্গ
প্রেশার কুকারের কান ফাটানো শব্দে
গৃহস্থালির কুশল বিনিময়; সব থেমে গেছে।
অথচ, এখন
কাজের সময়।
বড় রাস্তা মিশেছে একটা রঙিন ফোয়ারায়,
সাইকেল স্ট্যান্ডে সুইমিং পুল
কলিং বেলে রবিঠাকুরের
গান।
আর তারই ফাঁকে লাল হয়ে গেছে দিনগুলি
লাল হয়েছে সপ্তাহ, মাস , বছর;
ক্যালেন্ডার জুড়ে শুধুই রোববার।
অথচ, এখন
কাজের সময়।
এখানে বাতাসে গুঞ্জন বইত,
নটার সাইরেন শুনে উড়ে আসত
চিমনির ধোঁয়া মাখা কালিমানুষরা।
দরজার তালাতেও মরচে পরেছে, অনেকদিন
অথচ, এখন
কাজের সময়।
মৃত্যুর ডাইরি
পরিচয় পত্রের ভুল নাম, বাতিল ঠিকানা
রেশন না পাওয়া খালি ব্যাগ রাক্ষুসে খিদে
রেস্তরার উচ্ছিষ্টভোগী নগ্ন সভ্যতা
আমার ম্ররত্যুর জন্য দায়ী নয়
বন্ধ দরজা কড়া নাড়া হাপিত্যেশ দুপুর,
নামের ভুলে খারিজ হয় ভরতুকির চাল
সন্সোধবাদী টেবিলে টেবিলে প্রার্থনা, অঞ্জলী
বাতাসে ভাসে ভ্যাপসা খিদের গন্ধ
কলম সাক্ষী, মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়
চিট ফান্ডের পাওনা, সারের বাড়তি দাম
ড্যাম থেকে জল ছাড়া নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য তরজার মাঝে
বন্যা, মহাজনের দেনা, কৃষি ঋণ কেউ দায়ী নয়
ঘুষ দিতে না পাতা বেকার যুবক, পাড়ার মাস্তানের হাতে
লাঞ্ছিত কিশোরী, বন্ধ কারখানার শ্রমিকের আত্মহত্যার
জন্য কেউ দায়ী নয়
লাশকাটা ঘরে পায়ের ডগায় ঝোলে পরিচয় পত্র
মৃত্যু ডাইরিতে লেখা হয় একটাই জবানবন্দি
আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়
উড়ন্ত গালিচা
সব রূপকথা মেশে ধোঁয়াশায়,
রাজকন্যার এলো চুল আর
রাজপুত্রের উড়ন্ত গালিচায়।
পাহাড়ের নীচের গল্পগুলিতে
প্রাসাদের আলো পড়ে না কোনদিন।
সব রূপকথা মিলিয়ে যায় কল্পনার দেশে
পাঁজর সর্বসব সৈনিকের রক্তহীন মুণ্ডু
আর রাজপুত্রের প্রেম অমরত্ব পায়।
মৃত সৈনিকের ছেলে চাকরি খোঁজে
পার্টি অফিসের দরজায় দরজায়।
রাজপুত্রের যুদ্ধজয়, রাজ্যাভিষেক
রাজকন্যার সুখের সংসার,
উড়ন্ত গালিচায় মধ্যেমধ্যে বিদেশ সফর।
বোকা প্রজা ভাবে
গল্প বুঝি সত্যি হবে,
গালিচায় জায়গা হবে বলে তাদেরও।
রূপকথা পরে থাকে ঘরের ক্ষুধার্ত কোনে।
বিজয় মিছিলে হেঁটেও চাকরি হয়না
দীর্ঘশ্বাসে ভেসে যায় হতাশ গল্পকার।
প্রজারা থাকে না বলেই রূপকথার গল্প
সত্যি হয় না কোনদিন।
ধর্ম আসবে বলে
পৃথিবীর ক্ষত থেকে চুইয়ে পরছে রক্ত
ফোঁটায় ফোঁটায় সিরিয়া, ইরাক, গুয়েতেমালা....
কোথাও কিশোর হাতে ‘সময় বোমা’, অস্ত্র মিছিল।
পাকিস্তানের মসজিদ, মোগাধিসুর বস্তি পোড়ানো আগুন,
নিরুদ্দেশ হওয়া নাইজেরীয়
মেয়েগুলির কান্না,
সবই ছিল শুধু ধর্ম
প্রতিষ্ঠার জন্য।
কে ওরা? মুসলিম, হিন্দু নাকি বৌদ্ধ?
বৈষ্ণব, আদিবাসী, শিয়া, সুন্নি,খারিজি
নাকি শুধুই শুকনো মানুষ.......
যারা আকাশ মুখি হয়ে চিৎকার করত
রুটি দাও! জল দাও! শস্য দাও!
আর পারলে দিও একটু ভালবাসা!
সাক্ষী সোমালিয়ার প্রাগৈতিহাসিক কৃষক,
সাক্ষী বামিয়ান বুদ্ধের ভাঙা মূর্তি,
সাক্ষী আমেদাবাদ , সাক্ষী মুজফরনগর
আর নাফ নদীতে ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া শিশুর লাশ,
ধর্ম যখনই উল্লাসে মেতেছে -
তখন শুধুই ‘মৃত্যু’ এসেছে দরজায় দরজায়।
তুলোওয়ালা
আজকাল দেখিনা তোমায়, শুনিনা তোমার চেনা ডাক
যদিও শহরে শীত আসে, গোলার্ধ নেয় তার পরিচিত বাঁক।
আজও হিমানী সন্ধ্যা নামে , কুয়াশা জড়ায় দিনকাল
বৃদ্ধ রাত গড়ায় ভাঙা চৌকির পাশে, অগভীর শীতের সকাল।
শহরে আসে না শিমুল, কাপাস, দেখিনা তুলোর বোঝা
তোমার ফতুয়া, অপটু সেলাই, শীতের রোদে ভেজা।
হারিয়েছে লেপ, সেই লাল শালু, সস্তা দরের ছাপা কাপড়,
তবু শীত আসে, অপেক্ষায় এক প্রবীণ শহর।
সমস্তিপুর, মোতিহারি ,বেগুসরাই তোমার বাড়ি
লেপের আদর ছড়িয়ে দিতেই গ্রাম ছেড়ে এই শহরে পাড়ি।
এই শহরের সভ্যতা খায় তোমার ঋজু বাহুর পেশী
তুমিও যখন ঘুমিয়ে পরো , স্মৃতিরা জাগে অহর্নিশি।
তোমার কাঁধের ধোনাই যন্ত্র ঝোলে যেন সুঠাম ধনুক
শীতের রাতে উষ্ণতাতে শহর তোমার দুহাত কিনুক।
ষোলআনা দরাদরির পরেও থাকে হিসেব নিকেশ
খালি পেটের হিসেব রেখেছে, তোমার জন্য আমার স্বদেশ।
তোমার ঐ ছুঁচের ফোঁড়ে জীবন জোরা নস্কা আঁকা
পথের ধারের বারন্দাতে তোমার শীতের রাত্রি রাখা
কাজ জোটেনা , মজুরি কম, মুখ ফিরিয়ে প্রিয় শহর
উষ্ণ হচ্ছে এই পৃথিবী, বাতিল হচ্ছে লেপের আদর।
সে সব খবর তুমি কি রাখো, বদলে যাওয়া দিনের সাথে
শীতের রাত, আধপোড়া ভাত লেপটে
থাকে তোমার হাতে।
তবু তুমি মুঠোয় রাখ তমার ঐ সুঠাম ধনুক
শিতের শহরে টঙ্কারে তার নতুন করে তোমায় চিনুক।
জনৈক বুড়ো মালী
খেলা শেষ, খেলুড়েরা চলে গেছে বাড়ি
স্টেডিয়ামে ওড়ে খালি বাদামের ঠোঙা
বাসা খুঁজে ফেরে পরিযায়ীদের সারি।
ঝিমিয়ে নিচ্ছে ক্লান্ত চেয়ারগুলি
ইতিউতি শুয়ে ঠাণ্ডা চায়ের ভাঁড়
একা গ্যালারিতে সাঁতরে বেড়ায় হাওয়া
হাওয়ার পাঁজরে জমা আছে চিৎকার।
শোরগোল তুলে গলা
ফেটেছিল কিছু
ছলছল চোখ, ম্লান মুখও কিছু ছিল
কারো বুকে ছিল প্রিয় পতাকাটা আঁকা
খেলা শেষে কারো নীরবতা নেয় পিছু।
তিনিও নীরব, রোদ বৃষ্টিতে সঙ্গী একটা ছাতা
খেলা শেষ হলে কানেকানে কিছু সুখ-দুঃখের কথা
সে দুঃখ শুধু ঘাসেরা শুনতে পায়,
চোখের জলে শিশির নামে দূর্বা ঘাসের গায়ে।
খেলোয়াড় নন, কর্মকর্তা কিংবা নিজের দল
নড়বড়ে পায়া ভাঙা খাটিয়ার, ছেঁড়া ধুতি সম্বল।
কেটেছে সময়, মাস ও তারিখ, হিসেব মেলেনা আর
ভুলে গেছে নাম, ফেলে আসা গ্রাম, ফেলে আসা পরিবার।
সবকিছু শেষে যখন থামে, সমস্ত হাততালি
জেগে থাকে মাঠ, গ্যালারি এবং জনৈক বুড়ো মালী।
-------()----()------
হাসপাতালের আমেজি কফি শপ
আর তার নীচে চকচকে পিচ্ছিল মেঝে
বাকি আছে বেশ কিছু টাকা
সেটাই জানান দিচ্ছে মোবাইল ফোন বেজে
অকালীন প্রসব যন্ত্রণা, সময়ের কিছুটা আগেই
তোর বুঝি খুব তাড়াহুড়া ছিল
মুঠো হাতে বিদ্রুপ ছিল নাকি
অথবা কিছু স্লোগান যা ছিল সময়ের কাছে বাকি
মানবভ্রুন তোর গনগনে চিতা জ্বলে
তার উপর ওড়ে কয়েকটা চিল
মানবভ্রুন তুই বেঁচে গেছিস মরে
তোর দাদুর হাতে হাসপাতালের বিল
রবির আবিরে স্নান
দৃষ্টি জুড়ে ফাগুন বিকেল, ছন্দ
খেলে নদীর বুকে
ফুলের ভারে শিমুল পশাল চোখ
রেখেছে মাটির দিকে
কলম হাতে একলা কবি, মনের মধ্যে
ডুব সাঁতারে
বসন্তকে কবিতা শোনান বোলপুর
আর খোয়াই পাড়ে।
টেবিলে শুয়ে শান্ত কাগজ , দোয়াত-কলম-পকেট ঘড়ি
নীরব হাওয়া সঙ্গী কবির, শূন্য পথে পায়েচারি।
একটু দূরে কারা যেন
সুর তুলেছে রঙের গানে
আবির গন্ধ হাওয়ায়ে মেশে, কবির শান্তিনিকেতনে।
অস্তরাগে সুর্জ থেকে,
একটি মুঠো গোধূলি নিয়ে
বসন্ত তার রং ছাড়াল পথের মাঝে কবিকে পেয়ে
শিমুল থেকে পড়ল আবির কবির মাথায় –পায়ে- হাতে
রবীন্দ্রনাথ সিক্ত হলেন, আবির মেখে বসন্ততে।
-------()-------()------
বন্ধ মুঠোর আগল ভেঙে জড়ে পরে শুকনো জীবন
নিঃশব্দে, যেমন করে ঝড়ে পড়ে শিতের পাতারা
দশকের পর দশক দুবে জায় রাত পানীয়র অবচেতনে
খাবার টেবিলে চলে পাওয়া না পাওয়ার চর্বিত চর্বণ
বিপ্লব আসবে বলে প্রণামীর বাক্স ভারি হয়
রাতদিন ধরে তার হিসেব রাখে বিপ্লবের পুরহিতরা ।
নিয়ম করে খিদে পায়, কয়েক গ্রাসের পর আড্ডা জমে
ঢেকুরের সাথে উঠে আসে দীর্ঘশ্বাস।
এটা কি আমার কাজ? প্রশ্নটা ঘুম নিয়ে আসে
আলোচনার পর আলোচনা তারপর আবার আলোচনার
শেষে দলিল তৈরি হয়। দলিলে উপর জমে ধুলোর আস্তরণ
তার ভিতর থেকে উঁকি মারে ধুসর কয়েকটি অক্ষর
ডিনার পার্টিতে বিপ্লব খুঁজো না।
হাঁসুলির জ্যোৎস্না
শহরের দেহ
জুড়ে পিচ ঢালা আলপনা
পথের হাঁসুলি বাঁকে, চেনা নাগরিক বেচাকেনা।
হাঁসুলি চাঁদনি রাতে একা জাগে সোজা
ক্লান্ত শানিত ফলা জ্যোৎস্নায় ভেজা।
জ্যোৎস্না একলা হাঁটে আনমনে ধীরে
হারিয়েছে পথঘাট নিয়নের ভিড়ে।
চাঁদও ঘুমিয়ে
পরে, দিন অবশেষে
জ্যোৎস্না নিজেকে হারায় নিয়নের দেশে।
হাঁসুলি মজুর খাটে পথে আর মাঠে
আগাছা অশ্রু জমে হাঁসুলির বাঁটে।
ক্লান্ত শরীর তবু ঘুম নেই চোখে
জ্যোৎস্না ঠিকানা খোঁজে হাঁসুলির বাঁকে।
ডাইনি
ঢালু পথ গিয়ে মেশে আগাছার জঙ্গলে
কান্না পাহাড় জড়িয়ে
থাকে মৃত নদী
আর সাদা চুলের একটি ডাইনি জীবন।
স্থবির মানব করোটি আর গুনিনের চোয়ালে
সেদিন ছিল লোভ, ভয় আর অভীক দৃশ্যরন।
চোখে জল আসে না আর, মৃত নদীর মতোই,
শুধু জিভে জড়ায় তিতকুটে সামাজিক স্বাদ।
সেদিনও এসেছিল মৃত্যু, আগুনের চেহারায়।
ওঝার মন্ত্রগুলি বিদ্রুপ করেছিল সভ্যতাকে, তবু
মনে পরে ছেড়ে আসা গ্রাম, পরিবার, সন্তান
খারিজ হওয়া কুয়ার জল,দুয়ারের আলপনা।
স্মৃতির নৌকা ভাসে কড়াইশুঁটির ক্ষেতে,
কার্তিকের নবান্ন, পৌষের পিঠে আর
উঠোনের লতানে লাউ, ভাঙা আরশিতে লাল টিপ।
স্মৃতির কুয়াশায় পোড়া গন্ধ আসে ,
ছাই চাপা আগুনে আজও পোড়ে জীবনের অবশেষ।
সংশয় চোখ, অবিশ্বাস দৃষ্টিতে আছে ঘৃণা।
সমাজ , সভ্যতা, ওঝা, গুনিন, মহাজন আর
অনুর্বর ডাইনি জীবন।
কান্না পাহাড়, ঢালু পথ মিশেছে আগাছার জঙ্গলে
তার পাশে পড়ে মৃত নদী, অভিতপ্ত স্মৃতি নিয়ে
বেশ লাগে সমাজ, রাষ্ট্রহীন এই বেঁচে থাকা,
ডাইনি জীবন।
ভাষাসূত্র
সাহিত্য রোজ সীমান্তকে ভাঙে
দুহাত মেলায় বাঙলা
বইয়ের পাতা,
সন্ধ্যের ঢাকা ছোট গল্পতে মেশে
কবিতায় ভাসে দিনান্তে কলকাতা।
তোমার হৃদয়ে কোন সীমান্ত নেই
আমার শিরায় একুশে ফেব্রুয়ারি,
এপার যদি বাঙলার উঠোন হয়
ওপারে তবে বাঙলা ভাষার বাড়ি।
ভাষার সূত্রে দুটিপার একাকার
লালনের গানে সীমান্ত মুছে যায়,
বাঙলার টানে সাজু ফিরেফিরে আসে
রুপাইও ফেরে নকশী কাঁথাটা গায়ে।
তুমি প্রতিদিন পদ্মায় জেগে ওঠো
আমি ভেসে যাই
কালস্রোতে গঙ্গায়,
চোখ খুলে দেখি পাশাপাশি তুমি আমি
মাটিতে মিশছি প্রিয় এই বাঙলায়
বুক পকেটে সেতু
সময়: সকাল ৮.৪৫
তুমি খেয়ে নিও, ঔষধটাকে মনে করে
খেয়ো পরে
দরজাটাকে বন্ধ রেখো, আমি ফিরবো একটার গাড়ি ধরে।
আমার ভাতটা ঢাকা দিয়ে রেখো, আজকে টিফিন নেব না
কলকাতাতে সামান্য কাজ ,অন্য কোথাও যাব না।
সময়: দুপুর ২.৫০
বেলা বেড়ে যায় ঘড়ির কাঁটায় দুপুর গড়িয়ে বিকেল
ছেলেটা এলো না , স্টেশন ছাড়ল বেলা তিনটের রেল।
খবরে বলছে কোথায় যেন ভেঙ্গেছে উড়াল পুল,
ভেজাল ছিল সেতু নির্মাণে, ছিল অঙ্কের ভুল।
সময়: বিকেল ৫.৫৫
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যে নামছে, নামছে সেনা ও পুলিশ,
বাড়িতে জানাস দেরি হোলে তোর, ফোনটা কিন্তু নিস!
ফোনটা বাজছে, বেজেই চলেছে, খুঁজছে দেরির হেতু
বুক পকেটে ফোনের বদলে, বুকের উপর সেতু।
মুহূর্তের জন্য
মুহূর্তের ব্যবধানে ছেড়ে গেল শেষ ট্রেন,
একলা স্টেশনে ধুলো ওড়ায় অপেক্ষার শীত ঘুম।
ইঞ্চি খানেকের ব্যাকরণগত ভুলে
পা রাখা গেল না চলন্ত বাসে,
হাজিরা খাতায় লেপটে গেল সূর্যাস্তের আকাশ।
মুহূর্তের জন্য বাকিটুকু পাওয়া হল না কতবার
এলোমেলো রান্নাবাটি খেলাঘর, নিঃশব্দ মুহূর্তে
ঝরে পড়া অনুপলগুলি
নিয়ে
পার হয়ে গেল গেল আস্ত জীবন।
সামান্য সময়ের ব্যবধানে
আর দেবতা হওয়া হল না
বাদবাকি পথের নুড়িদের।
মুহূর্ত পেরিয়ে চলে গেল অনেক প্রিয়তা।
অগুনতি না ঘটা ঘটনার মাঝে
ভেসে উঠল কিছু নস্টালজিয়া , স্বপ্ন
যারা হারিয়ে যায়নি কয়েক মুহূর্তের জন্য।
গাছের কোটর ও গ্রীষ্ম অবকাশ
কিছুটা শৈশব জমা আছে বুড়ো গাছের কোটরে।
মেলার লাট্টু, লাটাই আর লেত্তিতে
লেগে আছে গ্রীষ্ম অবকাশ।
স্মৃতিসুখ গায়ে মেখে কৈশোরের বয়স বেড়েছে।
আজ আমি ঈষৎ ক্লান্ত, অবসন্ন, ন্যুজ।
বাগানের পাঁচিল, কাঁটা তারের বাঁধা
পেরিয়ে গাছটা হয়েছে মহীরুহ।
বৃষ্টিতে, ঝড়ে লড়তে লড়তে
দিন, মাস, বছর ধরে
শিকড়ে, কাণ্ডে জমা করেছে অনেক শৈশব।
তার মাঝে অচেনা লাগে,
আমার চেনা গাছের চেনা কোটরটাকে।
অসংখ্য শৈশবের মধ্যে যেন মিশে গেছি
ঈষৎ ক্লান্ত, অবসন্ন, ন্যুজ ‘আমি’।
শুধু জানি, এই গাছের কাছেই জমা আছে
মেলা থেকে কেনা লাট্টু,লেত্তি, লাটাই,
আর খানিকটা গ্রীষ্ম অবকাশ।
সন্ত্রাস ও শান্তি
শান্তি বার্তার সংগতে আসে বারুদ গন্ধ
আলোর গতির সঙ্গে পাল্লা দেয়
এপার ওপারের ধাতব দৌড়
বারুদের মুখে একসাথে নাচে
সন্ত্রাস এবং শান্তি!
বৃদ্ধ স্বদেশে মুখোমুখি বসেন
ইকবাল আর জাতির জনক
অশ্রুতে ভিজে যায় মাটি
আকাশ ভাঙে বজ্রপাতে, পাথর বৃষ্টি
ভয় দেখায় মেঘ, যখন একই সুরে কথা বলে
সন্ত্রাস ও শান্তি।
রাজার পাখি
তুমি রাজাকে নগ্ন বলেছিলে
সেটা অপরাধ!
রাজা তোমার শরীরে এঁকেছিল
বারুদের পোড়া দাগ
সেটাই আইন!
তুমি পথ আটকে ছিলে রাজার
চিৎকার করে চেয়েছিলে খাবার, জল,
আর ফেলে আসা বন্ধুদের খবর
সেটা ছিল অশান্তি!
রাজার পাইক ‘কার্ফু’ ডেকেছিল
শহরের বুকে,
শান্তির জন্য।
খাঁচার সুখ,
নিশ্চিত দানাপানি ছেড়ে,
তোমার শিকল
ভেঙে উড়তে চাওয়ার দাবি,
সেটা ছিল রাজদ্রোহ!
এখন তুমি খাঁচায় সাজানো ‘মমি’
রাজা হাত বোলান তোমার নরম পালকে
তিনি তোমার নাম দিয়েছেন
গণতন্ত্র!
যখন সময় নেই
দেওয়াল বেয়ে গড়িয়ে নামে
ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ড।
অবশেষে পৃথিবীর সমস্ত ঘড়ি
নিশ্চল হয়ে যায় একদিন।
ফ্যাকাসে হতে হতে দিনপঞ্জিকা
আলোয় পথে হারিয়ে যায়,
দিন, মাস, তারিখ।
ঠিক যেন রাতের স্বপ্ন,
ঘড়ি বিহীন জগতে
এক স্বাধীন বেঁচে থাকা।
গাছ, পাখি
আর প্রজাপতিদের রাজ্যে
অবলীলায় মিলিয়ে যায়
ধার করা সময়, বোকা টাইম টেবিল।
অরণ্য নিবির শান্তি ঝরে পড়ে
শিশিরের সাথে।
কোথাও যুদ্ধ নেই, পুড়িয়ে দেওয়া ফসল,
জঙ্গল কাটা রাস্তা কিংবা
বোমারু বিমানের দরাদরি।
দেওয়াল বেয়ে গড়িয়ে নামে সময়
ধুয়ে যায় সমস্ত সীমারেখা, ইতিহাস,
বেঁচে থাকে কিছু স্বাধীন মানুষ
সুখী গাছদের সমাজে।
মানব জমিন
হেঁটেছিল একদল শহর থেকে অরণ্যে
পায়ে মেখেছিল গোধূলির ধুলো,
যারা পার হয়েছিল তারা ভরা ঘুমন্ত রাত
হাতে নিয়ে মশালের মৃতপ্রায় আলো।
আকাশের নীচে চক্রব্যূহ এঁকেছিল কেউ
রক্তের স্ত্রোত বয়েছিল,
সীমান্তের শিরা উপশিরা দিয়ে,
কাঁটা তার ছিঁড়ে
যাবে একদিন
একটা সমাজ আঁকা হবে সব দেশ নিয়ে।
চৌকাঠ ভেঙে যাবে , ভেঙে যাবে দরজার বাধা
অরণ্য ঘিরবে শহর, সবুজের সীমাহীন মুগ্ধতা
সভ্যতার হৃদয় রাখা অরণ্যের ঋণ
যেখানে মানুষ মেশে অরণ্যে সেখানেই মানব জমিন
মহানাগরিক
তখনও ছিল শহরে শরৎ কাল
সাদা মেঘদের নাগরিক বসবাস,
চোখ রেখেছিল মেঘদের ঠিকানায়
ট্রামলাইনের হালকা সবুজ ঘাস।
শহরের এক বাসা বাড়িটির কোনে
অগোছালো দুটি টেবিল চেয়ার পাতা,
তাতে ছিল কিছু এলোমেলো আঁকিবুঁকি
উঠোনের কোনে বেখেয়ালি বনলতা।
শহর তখনও ইট পাথরেরই ছিল
তাকে ঘিরে ছিল অট্টালিকার সারি,
পায়চারি করা শেষ গোধূলির রঙে
কোন এক কবি কুড়িয়ে ছিলেন নুড়ি।
সেটাও ছিল শহুরে
সন্ধেবেলা
আজকে যেখানে বিরাট শপিং মল,
চকচকে পাতা রুপালি রেখার উপর
ট্রামেদের ছিল সর্পিল চলাচল।
যুগান্ত বুকে সে আকাশ ছিল কালো
তারারা ছিল সেদিন নির্বাসিত,
নিয়ন আলোয় মুখ ঢেকে ছিল চাঁদ
জ্যোৎস্না ছিল ঈষৎ বিড়ম্বিত।
সেখানে আজও ট্রাম লাইনটি আছে
কান্না শিশিরে ভেজে দুপাশের ঘাস।
এই ঘসেদের বুকেই অবশেষে
ঘুমিয়ে ছিলেন জীবনানন্দ দাশ।
বেআইনি
ঘন কুয়াশায় ডুব দেয়
সংঞ্জাহীন জ্যোৎস্না
অবশ হৃদয়ের পাশে রাত জাগা
অন্য হৃদয়ে স্পন্দিত হয় জীবন।
রেখাচিত্রের আঁকিবুঁকির সম্ভাবনায়
ঠিক হয় শ্বাস প্রশ্বাসের দরদাম।
হাসপাতালের অভ্যর্থনা টেবিলে
ওড়ে কয়েকটা বর্ণহীন প্রজাপতি,
বাষ্প চোখে যোগবিয়োগে
ভুল হয়।
তবু একটা ঠুনকো শরীরের ফুসফুসে
আষ্টেপৃষ্ঠে বায়ু ঠেসে দেয় যন্ত্র জীবন।
অবিনশ্বর করার মিথ্যে আশ্বাস
চেটেপুটে নেয় সবটুকু জমা পুঁজি।
অভ্যর্থনা টেবিল, নিবির পর্যবেক্ষণ কক্ষ
আর আবেগ মাপা যন্ত্রগণক জানে
এদেশে স্বেচ্ছা মৃত্যু আইনসিদ্ধ নয়।
বিষণ্ণ স্টেশন
হয়তো তোরও মনে পড়ে,
পশ্চিমা আলোয় ভেজা বিকেলগুলির কথা
যখন আকাশের রঙ নিয়ে লাল হয়ে যেত চরাচর।
গোয়ালা পাড়ার ছেলেদের সাথে
আমারাও মাটি মাখতাম মাঠে।
হয়তো তোরও মনে পরে,
বৈশাখের ফেলে আসা সন্ধের ঝড়ে
ভেসে আসত শাঁখের শব্দ ,
আমারা হাওয়ায় পা রেখে ছুটতে ছুটতে
চিৎকার করে বলতাম, পরজন্ম নেই
জানি, জানি, জানি.....
তবে যদি ফিরতেই হয় ফিরব এখানেই,
হয়তো তোরও মনে পরে।
তারপর সেই বিষণ্ণ স্টেশন, অচেনা কামড়া
হাওয়াকে চুরমার করে ছুটে চলা রেল…...
কতো সূর্য ডুব দিল পশ্চিমা আলোয়,
কিন্তু আর ফেরা হল না।
আকাশ রঙের মাটি, চাষিদের ছেলেরা,
পরিচিত সন্ধ্যার ঝড়ো
হাওয়ার কথা
হয়তো তোরও মনে পরে।
শুধু ধুসর হয়ে যায় দিগন্তে মেশা মেঠো পথ......
রেললাইন আর রঙচটা হলুদ সাইনবোর্ডে
সেই বিষণ্ণ স্টেশনের নামটা।
বর্ষামাস
মেঘেরা নেমেছে শহরের বুকে, গাছেরা ভিজছে একা
অফিস ফেরতা বাস থেকে নেমে বৃষ্টির সাথে দেখা।
বহুবার দেখা সেই চেনা মুখ, পরিচিত পথঘাটে
বৃষ্টির হাত রাখা ছিল
প্রেমিক মেঘের হাতে।
মেঘদের ছাদে বিবিধ ভারতী, পুরানো একটা সুর
অচেনা গায়কের চেনাচেনা গানে পথ হাঁটা বহুদূর।
সেই সুরটা ছাদটাই চেনে, চেনে রেলিঙের ধার
বর্ষা মানেই ছাদের অতিথি শ্যাওলার পরিবার।
শহরে এসেছে বৃষ্টি, গেছে মেঘটাকে দেখা
ঘরের কোনে বান্ধব হীন
ছাতারাও ছিল একা।
দরজার কোনে ধুলো মাখা মনে, কেটেছে হপ্তা-মাস
ছাতাদের কাছে বসন্ত মানে শুধুই বর্ষামাস।
স্মৃতি ভেসে গেল অর্থনীতিতে
বড় বেমানান বৃদ্ধ বাড়িটা আজকে বিদায় নিল
বুড়ো বাড়িটার চিতা থেকে ওঠে ইতিহাস মাখা ধুলো।
ভাঙা দরজাটা আজ আর নেই, মাঝরাতে কড়া
নাড়া
বাড়িটার শোকে থমথমে আজ পুরানো বাড়ির পাড়া।
বৃদ্ধ বাড়িটা আনাত্মীয়! প্রতিবেশী যারা ছিল
একএক করে প্রমোটার ঘুরে, তারাও বিদায় নিল।
বাড়িটার ছাঁদে বাসা বাঁধা পাখি ভেবেছিল মনে মনে,
ছানাগুলো তার এই বড় হয়ে যাবে, এই বাড়িটারই কোনে।
খিড়কির চোখে জমা ছিলো, কত না জানা কথা
চিলেকোঠার গল্প বলা হাতে সেলাই কাঁথা।
এই চৌকাঠ পেরিয়ে প্রথম এসেছিল যারা ঘরে,
সিঁড়ির ঘর, সদর দরজা কেঁদেছিল তাদের বিদায় করে।
শানের উঠোন, ঘুলঘুলি
আর কাপড় মেলার দড়ি
দেয়ালে ঝোলানো বছর, তারিখ, ঘণ্টা বাজানো ঘড়ি
ধুলোয় মিশল অনেক কথাই, গেল সময়ের পেটে
স্মৃতি ভেসে গেল অর্থনীতিতে ‘বাড়ি’ রিয়েলেষ্টেটে।
বনবাস
শ্যামবাজারের গাড়ি
বারন্দায় বেলা করে আসে রোদ্দুর
পালিশ ওঠা কাঠের চেয়ারে নামে এক চিলতের বিশ্রাম।
দিন গড়ায়, শান্ত টেলিফোনের পাশে ঝিমুনি আসে
সল্টলেকের জানলায়, বিড়ালটা আড়মোড়া ভাঙে পাপোষে।
বিকেলে শপিং মল থেকে অল্প দুরের বাড়িটায় মিথ্যে আশায়
ফাঁকা চিঠি বাক্সের দরজা খোলে কোন এক বৃদ্ধ।
অপেক্ষায় সন্ধ্যে নামে ঘসা কাঁচের শহরে।
স্থির, নিস্তরঙ্গ, স্মৃতি সম্মোহিত হয়
ঈষৎ অবসন্ন কোলকাতা।
অনেক চেনা শব্দের মাঝেও নাম ধরে ডাকে না কেউ!
স্লোগান, ভাষণ, আর
হেডফোনের অন্তরঙ্গতা পেরিয়ে
দুটো কথা বলতে, চড়া সুদে সময় ধার করতে হয়।
ফিনফিনে ঘুম ভাঙায় অসময়ের টেলিফোন,
ওপারে তখন সকাল, নিয়মমাফিক খোঁজখবর!
ব্যাঙ্কের লেনদেন, রক্তচাপের মাপজোক কিন্তু
কি গান শুনছো আজকাল? জানতে চায় না কেউ!
ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য অতঃপর বেলা শেষে,
অন্তহীন বনবাস চলে কল্লোলিনীর গভীরে।
কিছুই অলৈকিক নয়
একজন্ম লড়াই, তারপর ব্যর্থতাউত্তর
অগুন্তি ক্লান্তি নিয়ে একটি দিনের ক্ষয়।
নক্ষত্র পোড়া রাতে দলা পাকানো স্বপ্ন মুখ ঢাকে
সাদা ফিনফিন চাদরে
কিছুই অলৌকিক নয়।
জাহাজের সেই নাবিক, ফিরতে চায়
তার না দেখা সন্তানের
কাছে,
মনে পড়ে বন্দরের অন্ধকারতম কোনে
দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার মুখ।
তার দুদিন উপোষ করা চোখে ছিল
স্বপ্নের রুটি আর শ্যয়লা জীবন।
কিছুই অলৌকিক নয়
বিমান থেকে পড়া আলৌকিক বাক্সগুলির দিকে
চকলেট, কেক ভেবে ছুটেগিয়েছিল যারা
বোমা, গুলি আর বারুদ দেখে বুঝেছিল
কিছুই আলৌকিক নয়।
সব না পাওয়ার পিছনে কিংবা
বেশি পাওয়ার গোপন জাবেদা খাতায়
কুয়াশায় ঢাকা আঙ্গুলের নিঁখুত হিসাবনিকেশ,
পুতল নাচের ইতিকথা যুগে যুগে বলেজায়
কিছুই আলৌকিক নয়।
পাঁচ দশক পর
কিছু স্লোগান ছিল ঠোঁটে
কিছু কান্না চোখ ছুঁয়ে যায়,
শিকলে বাঁধা স্বপ্নে ভেজা রাত
অপেক্ষা, কবে দিন বদলায়।
চেনা কোন আলোছায়া গলি
রাত চেরা কোন কোন ছুট,
কারা যেন পিছু নিয়েছিল
গুলি, লাঠি
কিছু ভারি বুট।
আজও কেউ জেগে থাকে রাতে
মৃত স্বপ্নরা খোঁজে চোখ।
সময়ের দাবি মেনে নিয়ে
কেউ কেউ
বলে স্লোগানটা একবার হোক।
গলাগুলি চেনাচেনা যেন
মুখগুলো ইতিহাসে দেখা।
এই শহরের পাঁজরে ও কঙ্কালে
মুঠো হাত আজও আছে আঁকা।
পাঁচটি দশক ভেসে গেল
কালস্রোতে
স্মৃতিতে উড়ছে নিশান রঙের ঘুড়ি।
ভাঙ্গা স্বপ্নকে চোখে আর বুকে নিয়ে
আজও জেগে আছে প্রিয় নকশাল বাড়ি।
অনুকবিতা
১
প্রতিবিম্ব ফেলে রেখে বনবাসে যেতে হয়,
বিজ্ঞাপনে লেখা থাকে
‘পরিবার প্রীতি’।
ক্ষমতারা বেঁচে ওঠে অগ্নিপরীক্ষার আগুনে
প্রচলিত মতে এটা ‘রাজনীতি’।
২
শাসক হৃদয় খুলে রাখেন দেরাজে,
হাত বদলের সাক্ষী থাকে আয়না।
তিনি চলে যান আসন ছেড়ে
তাঁর পাদুকা সিংহাসন ছাড়ে না ।
৩
নাম সংকীর্তন, অতঃপর নির্বাচন উৎসব,
দুই পক্ষে চলে কিছু দেওয়া নেওয়া।
পোলাও, আলুর দম, লুচি ও সন্দেশ
কারো একবেলার নিমন্ত্রণ, কারো প্রতিদিনের খাওয়া।
৪
যারা স্রোত ভাঙে, ইতিহাসে
তাদের চলে নিত্য
নিকেশ।
কখনও তিনি ‘দশানন’
কখনও গৌরি লঙ্কেশ।
দিন গোনে দ্রোহকাল
শব্দরা নীরব এখন
নড়বড়ে শরীরের হাড়।
কালির দোয়াতে রাখা
শেষ শ্বাসটুকু টেনে নিয়ে,
বেঁচে আছে কংকালসার।
অক্ষর খনি গহ্বরে
ভিজে গেছে ক্লান্তি ও ঘামে,
অগোছালো কিছু সাদা পাতা
কলমে রক্ত ফোঁটা নামে।
বাক্যরা নির্বাক শ্রোতা
ঠোঁট, জিভ
বন্ধক রাখা।
আলো নিয়ে উড়ে যেত যারা
বন্দি সে জোনাকির পাখা।
উচ্ছল স্বপ্নের চোখ
ঢাকে মৃত নগরীর কালো রাত,
কারাগারে বন্দি কবিতা
চাবি চাটে ধর্মের হাত।
বসন্তেও আজ পাতা ঝড়ে
শিরদাঁড়া বেয়ে নামে
শীতকাল
কলমটা কারা যেন কিনে নিতে চায়
তবু দিন গোনে, দ্রোহকাল।
ঘুম
১
ছিটকে
আসে হাওয়া।
ফুটপাতে ঘুমের মাঝে
অর্থনীতির হিসাব শেখায় রাত,
নির্বিঘ্নতাই স্থির করে ঘুমের দরদাম।
২
স্বপ্ন
থাকেনা ঘুমে
জেগে থাকে ভয়।
কখন ভেঙে যায় তন্দ্রা,
তার পরেই গিলতে আসে জাগরণ।
৩
মৃত্যুর
অনুভব নেই,
ঘুমের আবেশ ক্ষণস্থায়ী।
ঘুম যেন অপেক্ষমাণ প্রেমিক
মৃত্যু নীল শাড়িতে বিলম্বিত প্রেমিকা।
অনুকবিতা
১
মন মুক্তির পরিপন্থী
মস্তিষ্ক স্বাধীনতা প্রিয়।
হৃদয়ের দুই অলিন্দে শৃঙ্খলা
খোলা আকাশে মুক্তি খোঁজে মনন।
২
আঁখি পল্লব অশ্রু প্রিয়
দৃশ্যে খোঁজে আবেগ।
দৃষ্টি অনুসন্ধানী,
খোঁজে আবেগহীন কোন চোখ।
৩
অভিমান আবেগ স্নাত
তাতে মেশে আশাহত হৃদয়।
সম্পর্ক কাঁচের মতো
কখনও স্বচ্ছ,কখনও প্রতিচ্ছবি।
৪
কিছু হৃদয় খড়কুটোময়
যন্ত্রণা শূন্য রক্তহীন।
কিছু হৃদয় রক্তাক্ত
প্রতিটি রক্ত ঝরা হৃদয়ে বন্দি থাকে ‘প্রেম’।
কান্না ধোয়া বৃষ্টি
একটি ফোঁটা মুক্তো ছড়ায় অন্য ফোঁটা মুকুট গড়ে
দু-চার ফোঁটা পাতার উপর মেঘের দিকে আয়না ধরে।
শুধুই সবুজ চারিদিকে, বৃষ্টি মেশে নদীর বাঁকে
ভরা ক্ষেতে প্রাণের ছোঁয়া, জল গড়িয়ে টালির ফাঁকে ।
খালের ধারে মোরাম পথ, সেচের জলে ঢেউ
নতুন শাড়ির স্বপ্ন দেখে ক্ষেত মজুরের বউ।
কয়েক ফোঁটা চোখের উপর, ঝাপসা হওয়া দৃষ্টি
বর্ষা মানেই গাল গড়িয়ে কান্না ধোয়া বৃষ্টি।
পুকুরের প্রতিবেশী গাছ
পাখিটির বাসা ছারখার
পড়ে আছে পোকাদের লাশ
পিঁপড়েরা আচমকা উদ্বাস্তু
ভিটে ছাড়া করেছে সন্ত্রাস
এলোমেলো আসবাব বাড়ি
কারা যেন কড়াত শানায়
পড়শিরা ভয়ে ভয়ে আছে
আচমকা জঙ্গি হানায়
আজ কোন শোকসভা নয়
জনাজা, শ্মশানের লাইন
মুনাফায় কড়াতের কল
বিশ্রামে মানুষের আইন
একা একা পুকুরের পাড়
পেয়ে গেছে বিপদের আঁচ
বড় বাড়ি হবে তার বুকে
তাই খুন প্রতিবেশী
গাছ
প্রতিবাদের
কবিতা
কাব্যরা আজ রাত জাগে রাজপথে
ছন্দ বেঁধেছে ব্যরিকেট
প্রতিবাদে
হুশিয়ার থাকো চাপাতির ফলা তুমি
কবিতা জাগছে গুলশন, বাগদাদে।
বাংলাদেশ আর ইরাকি বন্ধু শোন
কবিতার সাথে আমারাও আছি জেন
গুলশানে আর বাগদাদে হাতে হাত
কলম করছে মৃত্যুর প্রতিবাদ।
যদি ভেবে থাক অন্ধকারের জীব
কবিতা মানেই দুর্বল, নির্জীব
তবে জেনে রাখ এই শব্দেরই জোরে
মানুষ দাঁড়াবে তোমার দিকেই
ঘুরে।
কবিতা জাগছে প্রতিবাদে
প্রতিরোধে
জেগে আছে কবি রক্তের ঋণ শোধে
শব্দ পড়েছে মাথায় শিরস্ত্রাণ
মিছিলের মুখে জেগে প্রতিবাদী
গান
কুয়াশার ছায়া
ছায়ারা ক্রমে দীর্ঘ হয়
দিনের বয়েস বাড়ে
দিন শেষে ছায়ারা ঘুমোয়
নিবিড় অন্ধকারে
গভীর রাত নিথর ঠাণ্ডা
অনুকরণের ইতি
ছায়াঘুম জুড়ে দিনের স্বপ্ন
জেগে থাকার স্মৃতি
অনুসরনের সময় শেষে
অন্যরকম দিনে
ছায়ারা ডুবছে ক্রমেই ডুবছে
অনুকরনের ঋণে
ছায়াপথ জুড়ে গভীর রাত্রি
পড়ে ছায়াদের লাশ
প্রতিবিম্ভের দেশ জুড়ে চলে
কুয়াশার সন্ত্রাস
বাতলিং...
কার কথা কে শুনবে
এখন সেটাই বড়ো কথা
নেতার কথা জনতা
না জনতার কথা নেতা
নেতার বলার মাইক আছে
জনতা অমায়িক
হীরক রাজার রাজ্য সভায়
রাজাই কেবল ঠিক
রাজার আছে সেপাই শাস্ত্রী
আছে ঢাক ঢোল
প্রজার কথা কেইবা শোনে
ভরসা হরিবোল
হরিবোল আর হরিমটর
চিবোয় বসে প্রজা
রায় সুকুমার মন্ত্র দিলেন
মুণ্ডু রেখো সোজা।
এভারেস্টের ডাক
কুয়াশা চাদরে একাকার দিনরাত
তুষার বৃষ্টি ছুঁয়ে আছে দেহ জুড়ে
হিমালয় তবু ডাক দেয় বারবার
পথ উঠে গেছে বহু গিরিখাত ঘুরে ।
পাহাড়ের আছে নিজস্ব এক ভাষা
পাথরেও কিছু গল্প বলার থাকে
দিগন্ত জোড়া ধূধূ বরফের দেশে
এভারেস্ট তার প্রিয়জনদের ডাকে।
কেউবা শিখরে পতাকাটা টানটান
ক্লান্ত মুখেও জয়ের হাসি হাসে
শেষ নিশ্বাসে পাহাড়ের কোলে কেউ
জীবনের থেকে পাহাড়কে ভালবেসে।
পাহাড়ের ডাকে যারা ফিরেফিরে যায়
ভুলে গিয়ে সব হিসেব-পাওনা-দেনা
তারাই জানে কি আছে সেই আহ্বানে
পাহাড়ের ডাক যাদের কাছে চেনা।
বরফের দেশ চিঠি পাঠিয়েছে মেঘে
ডাক চলে গেছে দূর থেকে বহু দূর
পাহাড়ের আছে নিজস্ব কিছু ভাষা
মৃত্যু পেরিয়ে জীবনের
এক সুর।
সন্ত্রাস ও শান্তি
পরিচিত শব্দের সংগতে বারুদের ছায়া
আলোর গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধাতব দৌড়
৯ মিলিমিটারের মুখে একসাথে নাচে
সন্ত্রাস এবং শান্তি
অন্ধকারে মুখোমুখি ইকবাল আর জাতির জনক
আকাশ ভাঙে বজ্রপাতে, পাথর বৃষ্টি
ভয় দেখায় মেঘ, যখন একই সুরে কথা বলে
সন্ত্রাস ও শান্তি
বর্ষা এসেছে শহরের বুকে গাছেরা ভিজছে একা
অফিস ফেরতা বাস থেকে নেমে বৃষ্টির সাথে দেখা
বহুবার দেখা সেই চেনা মুখ পরিচিত পথঘাটে
বৃষ্টির হাত রাখা ছিল সেই চেনা মেঘটার হাতে
মেঘদের ছাদে চিলেকোঠা জুড়ে পুরানো একটা সুর
বিস্মৃত কোন গায়কের গানে পথ হাঁটা বহুদূর
সেই সুরটা ছাদটাই চেনে
রেলিঙের ধার
বর্ষা মানেই ছাদের অতিথি শ্যাওলার পরিবার
শহরে এসেছে বৃষ্টি, গেছে মেঘটাকে দেখা
ঘরের কোনে বান্ধবহীন ছাতারাও ছিল একা
দেরাজের কোনে ধুলো মাখা মনে কেটেছে হপ্তা-মাস
ছাতাদের কাছে বসন্ত মানে শুধুই বর্ষামাস।
তিলত্তমার আকাশে ওড়ে পরিজায়ী মেঘেদের দল
ধুলোরা বৃষ্টি মাখে ময়দানে ,প্রথম বর্ষায়।
শহর পেরিয়ে মফঃস্বল আর মফস্বল পেরিয়ে ফস্লের ক্ষেতে
বৃষ্টির শব্দ ভেসে চলে, অর্নগল
লাজুক চাঁদ ক্ষনিকের জন্য উঁকি মারে খোলা জানলায়
তারারা হারিয়েছে মেঘেদের রাজ্যে, প্রথম বর্ষায়
বুড়ো ডালে জমা হয় স্বপ্ন, জেগে ওঠে
নশ্বর লালচে জীবন, সবুজ পাতায়
বৃষ্টির ফোঁটারা
আবাধ্য হয় চশমার কাঁচে
শহরের বুকে নেমে আসে মেঘেদের সন্তান
সমস্ত ছাতার উপেক্ষাকে রুখে বর্ষা নামে
ভিজিয়ে দেয় এই বৃদ্ধ শহরকে।
ভোলানাথের আইপড এবং রবি
পলাশ, শিমুল দুলছে হাওয়ায়, আকাশ সেজেছে মেঘে
শহর জুড়ে মেঘমল্লার কালবৈশাখীর আগে
একটা ছেলে অনেক দূরে, শুনছে চেনা গান
অচেনা শহরে,
চেনা বৃষ্টিতে দেশের মাটির টান
এই শহরেই শিশু ভোলানাথ দেখে অবাক চোখে
কে যেন আজ ডাকছে তাকে ভেজা রাস্তার বাঁকে
সাদা পোশাক ,লম্বা দাড়ি, হাসছে মিটিমিটি
মেঠো পথ আর টাপুরটুপুর একসাথে লুটোপুটি
ভিজছে শহর,
কাকভেজা বাড়ি, থইথই চেনা পথ
বৃষ্টি লিখল একটা
কবিতা আর মেঘ রবীন্দ্রনাথ
সূর্য যেমন বিদায় নিয়েও, ফেরে পৃথিবীর টানে
গাঙচিল ফেরে নদীটির তীরে বাউল রবির গানে
ভোলানাথ আজ সীমানা
ছাড়িয়ে অন্য দেশে কাজে
বৃষ্টি বিকেলে তার
আইপডে রবিঠাকুর বাজে।
রবীন্দ্রনাথ-২০১৬
বাড়ির উপর একটা বাড়ি, ছাদের উপর ছাদ
বাড়ির উপর একটা বাড়ি, ছাদের উপর ছাদ
ছাদ পেরিয়ে চিলেকোঠায় জেগে রবীন্দ্রনাথ
মেঘরা আসে দেশ পেরিয়ে, বৃষ্টি মারে উঁকি
দূর কাবুলে চিঠি পাঠায় কলকাতার এক খুকি
প্লাবন সময়, আকাশে যখন অন্ধকারের শুরু
সেই প্লাবনে ডিঙ্গা ভাসান নাবিক কবিগুরু
তিনি নিজেই স্বপ্ন দেখান, গোলকধাঁধায় পথ
স্বপ্নভঙ্গ হলেও দেখি পাশে রবীন্দ্রনাথ।
নতুন বছর
চলে যাওয়া সময়ের হাতে হাত রেখে আসে নতুন বছর
জমানো পিছুটান, কিছু দেখা না দেখা
ঘুর পাক খায় বাতাসে।
ভবিষ্যতের ঝুলিতে ক্রমশ ধূসর স্মৃতি
দোলে কালবৈশাখীর এলোমেলো হাওয়ায়।
নতুন বছর আসে ঝড়ের হাত ধরে
বুক চেরা মাটিতে স্বপ্নের ধান বোনে নববর্ষের সকাল
প্রভাতফেরী নিশানে ওড়ে পাহাড় ডিঙানোর স্বপ্ন , নববর্ষ।
বুকের উপর
তুমি খেয়ে নিও, ঔষধটাকে মনে করে
খেয়ো পরে
দরজাটাকে বন্ধ রেখো, আমি ফিরবো একটার গাড়ি ধরে
আমার ভাতটা ঢাকা দিয়ে রেখো, আজকে খাবার নেব না
বড়বাজারে সামান্য কাজ ,অন্য কোথাও যাব না।
বেলা বেড়ে যায় ঘড়ির কাঁটায় দুপুর গড়িয়ে বিকেল
ছেলেটা এলো না , স্টেশন ছাড়ল বেলা তিনটের রেল।
খবরে বলছে কোথায় যেন ভেঙ্গেছে উড়াল পুল
ভেজাল ছিল সেতু নির্মাণে ছিল অঙ্কের ভুল
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যে নামছে, নামছে সেনা ও পুলিশ
বাড়িতে জানাস দেরি হোলে তোর, ফোনটা কিন্তু নিস
ফোনটা বাজছে, বেজেই চলেছে খুঁজছে দেরির হেতু
বুক পকেটে ফোনের বদলে, বুকের উপর সেতু
এখন বৈশাখ
ছাপা শাড়ি ,ছিটের জামা শহর থেকে তেল
বৈশাখ মানেই লাটাই- লাটিম বাবার ফেরার রেল।
হালখাতা আর নাগরদোলায় ছিল বৈশাখী মেলা
আটচালাতে মঞ্চ বেঁধে রবি ঠাকুর বলা।
মুখোশ এবং বহুরূপী প্রভাতফেরির দিন
বৈশাখ মানেই শোধ হয়েছে মহাজনের ঋণ।
ধানের গোলা,নিকনো উঠোন, ঠাণ্ডা শীতলপাটি
আম বাগানের দুপুর ছিল শান্ত পরিপাটি।
এখন ব্যস্ত শহর জীবন, মাসের মাঝামাঝি
লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে জীবন ভোজবাজী
ক্যালেন্ডারে চুপিসারে বাঙলা বছর আসে
সাল তারিখের হিসেব কষতে হোঁচট খেয়ে হাসে।
গ্রাম ছেড়ে আজ ছিটের জামা ঠাণ্ডা ঘরে বন্দি
ফাইলের মাঝে খোঁজে কেবল হারিয়ে যাওয়ার ফন্দি।
আবাসনের জানলা দিয়ে সূর্য মুচকি হাসে
পয়লা বৈশাখ সকাল কাটে অফিস যাওয়ার বাসে।
তদন্ত চলতে থাকে
জুতো ছিঁড়ে যায়, ঘড়ি থামে ক্লান্ত বিকেলে
গোধূলি পেরিয়ে রাত নামে, তালা পড়ে সূর্যের দরজায়
নদীও শেষ হয় একদিন, কিন্তু তদন্ত চলতে থাকে।
উৎকোচ তত্ত্ব শুয়ে থাকে পরশুরামের কফিনে
চৈত্রের সেলে সস্তায় বিক্রি হয় সাংবিধানিক শপথ
ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে ক্রমাগত কেনাবেচা
তবু তদন্ত চলতে থাকে।
এক না শেষ হওয়া পথ ধরে এগোতে থাকে সত্যের খোঁজ
চেয়ার বদল হয় রং বদলে যায় ফাইলে ঘুমন্ত কাগজের
ভেজাল তেল থেকে জাল ঔষধ
প্রশ্নের জন্য ওড়া টকা প্রশ্ন থামায় নিজের নিয়মে
তবু তদন্ত চলতে থাকে।
অপরাধের বছর ঘোরে, মোম জ্বালায় কেউ
নতুন অপরাধ জায়গা করে নেয় টেলিভিশনে
অপেক্ষার পর চিরবিদায় নেয় বিচার প্রার্থী
তবুও তদন্ত চলতে থাকে।
ঘুড়ির গান
একটা লাটাই মুক্তি ওড়ায় একটা আকাশ প্রাণ
চেনা ছাদের চিলে কোঠায় চেনা গলার গান
একটা গলি অনেক দিনের অন্ধকারেও চেনা
গলির মুখের ফেরিওলার থেকে স্বপ্ন কেনা
একটা রোয়াক নিয়ন আলো পেরিয়ে আসা চাঁদ
গল্প করছে নিরাবতা টপকে স্মৃতির বাঁধ
সবুজ ডায়রি লালাচে পাতা ছন্নছাড়া ছন্দ
ভুল করে আসা একটা চিঠি, চেনা শব্দবন্ধ
ঠিকানা খুঁজতে হেঁটে ছিলাম অনেক বছর আগে
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে চেনা রাস্তাটা জাগে
রবির আবিরে স্নান
দৃষ্টি জুড়ে ফাগুন বিকেল, ছন্দ
খেলে নদীর বুকে
ফুলের ভারে শিমুল পশাল চোখ
রেখেছে মাটির দিকে
কলম হাতে একলা কবি, মনের মধ্যে
ডুব সাঁতারে
বসন্তকে খুঁজে রেড়ান বোলপুর
আর খোয়াই পাড়ে।
টেবিলে শুয়ে শান্ত কাগজ , দোয়াত-কলম-পকেট ঘড়ি
বসন্তকে খোঁজেন কবি, একলা পথে পায়েচারি।
একটু দূরে কারা যেন
সুর তুলেছে রঙের গানে
আবির গন্ধ হাওয়ায়ে মেশে, কবির শান্তিনিকেতনে।
দিনের শেষে রবির থেকে, একটি মুঠো গোধূলি নিয়ে
বসন্ত তার রং ছাড়াল পথের মাঝে কবিকে পেয়ে
শিমুল থেকে পড়ল আবির কবির মাথায় –পায়ে- হাতে
রবীন্দ্রনাথ সিক্ত হলেন, আবির মেখে বসন্ততে।
স্রীমান বাজেট
কানে গুঁজে পেনসিল
হাতে নিয়ে যন্ত্র
কর্তা শুনিয়ে যান বাজেটের মন্ত্র
কোন খাতে কত জমা কোন খাতে বাকি
চলবে না কোন ভাবে আয়কর ফাঁকি
উচ্চ মুচকি হাসে খুশি ভরা চিত্তে
হাঁসফাঁস মধ্যরা খরচের বৃত্তে
নিম্নরা সামলিয়ে হৃদয়ের পাখি
বলে, হিসেবটা
পরে হবে আগে বেঁচে থকি!
মেলেনা হিসেব জমা খরচের কাজে
খুচরা পয়সা নাচে
পকেটের ভাঁজে
হিসেব শুনেই করে টন টন পেট
স্বপ্নেও তাড়া করে শ্রীমান বাজেট।
রং
ছাদের ঘরের ছবি আঁকার খাতা ছুঁয়ে আমি
রওনা দিলাম রামধনুর দিকে।
ছড়িয়ে পড়লাম আকাশে , মুক্তি হয়ে উঁকি দিলাম
দিনমজুরের জানলায়, প্রশ্ন করলাম ‘চিনতে পারো?’
পাতা থেকে চুইয়ে পরা বসন্তের হাত ধরে
লুটোপুটি খেলাম ঘাসে, ডুব দিলাম নিঃশব্দ উজ্জ্বলতায়।
তুলির আঁচড়ে লুকিয়ে রাখলাম জমে থাকা কান্নাকে।
এক বাক্স খুশি হয়ে ফুটে উঠলাম শিশুটির হাতের মুঠোয়
প্রজাপতিদের পাখায় ভর করে উড়লাম কল্পনার রাজ্যে থেকে রাজ্যে।
দিনের শেষে নিজেকে মেলে ধরলাম তারাদের মাঝে।
আবিরের গন্ধে আর ফুলের শরীরে নিজেকে খুঁজে পেলাম
হাওয়ায় উড়িয়ে তোমরা আমার নাম দিলে ‘রং’।
শীতের রাত শেষে........
শীতের রাত শেষে, কুয়াশারা ফিরে যাবে বাড়ি
শিশিরেরে শেষ ফোঁটা নিয়ে ময়দানে চলে কাড়াকাড়ি
শীতের রাত শেষ, মনখারাপ সোয়েটার কোট
শীত যাচ্ছে চলে, শুধু হাসে চেনা এক ঠোঁট
ঝুপড়িতে নানা আঁকিবুঁকি, ফুটো দিয়ে শীত মারে উঁকি
প্লাস্টিক জড়িয়ে নিয়ে গায়ে, সাড়া রাত একা কেঁপে
যায়।
শীতের রাত শেষ, হাসি হাসি মুখ ফুটপাত দঙ্গলে
‘ ফুট
ফুট ফুট ফুরররর!এবার শীতেও বেঁচে গেলাম’, ক্ষ্যাপা ওঠে বলে।
স্বদেশ প্রেম............
কাকে বলে প্রেম আর কার নাম স্বদেশ
দেশ প্রেম জিলিপি? নাকি আগস্টে সন্দেশ?
প্রেম মানে ঠিক কি? খুঁজছি এখনও
দেশ মানে সীমারেখা , নাকি মানুষ কখনো সখনো?
দেশ প্রেম কি জমি দখল, নাকি জমি হীনের ঠাই?
রাষ্ট্র হোক বটের ছায়া, বাঁচুক সবাই
স্বদেশ প্রেম কি কামান বারুদ জলপাই আর খাকি
ভারত-পাক ক্রিকেট ম্যাচে দেশ প্রেম মাখি
কেউ স্বদেশের ধর্ম খোঁজে, কেউ বলে নিরপেক্ষ
দেশ প্রেমিক শাসক দল, নাকি বিরোধী পক্ষ?
দেশ মানে ওরাও কি, যারা বিদ্রোহী রঙে?
নাকি স্বদেশ প্রেম শুধু তাবেদারি ঢঙে
দেশ মানে কি একটা জমি, কাঁটা তারে ঢাকা?
নাকি দেশ সীমাহীন ভালবাসায় মাখা?
দেশ কি তৈরি কংক্রিটে ? চুন, বালি , ঘেঁস
দেশ আসলে মানুষগুলোই, মানুষ মানেই দেশ।
The house of Sitar maestro Ustad Allauddin Khan was
ransacked at Bramhabberia in Bangladesh
by a fanatic mob. Reports said they were students and they were protesting the
killing of another student in a conflict. Pandit Hariprasad Chourasiya reacted
in pain. Ustad Rasid Khan, Pandit Tejendra Narayan Majumdar and others also
expressed deep concern. The poem is in protest of every brutality against the culture.
When tune cries…………..
Melody makes the race happy
Sometimes tune makes us cry
When tune cries, blood moist the soil
The black cloud covers the sky
They didn’t know, what they were doing
Tune cried
The devastated Bamiyam Buddha
They didn’t realise……
Tune cried
They ransacked Ustad Allauddin’s memory
They didn’t understand….
They fired the rhythms, the did tear the strings
Tune cried
Pawns came, the ring masters were in cover
The melancholy tune came
The flute shouted in pain
The pain will turn revolutionary soon
When tune cries protest arises
Tune cried
It’s the time of turn around.
একটি নাবালক ছেলে এবং ........
চিৎকারে বুক চেরা রাত,
তারপর স্তব্ধতা নামে
যন্ত্রণা, রক্তের স্রোত, মৃত্যুর দেশে গিয়ে থামে
ছেলেটা কি ফিরে দেখেছিল?
মৃতপ্রায় মেয়েটার দিকে
এত ঘৃণা
এলো কোথা থেকে? ধর্ষণ নাবালক চোখে
ধর্ষক নাবালক তাই,
সাত খুন মাফ হওয়া চাই
রাজপথে ওড়ে সাদা খই,
মুখ ঢাকে আইনের বই
পথে ছিলে দেশ একসাথে,
চোখ ভিজেছিল কান্নায়
নির্ভয়া পেল কি বিচার?
এভাবে কি থামে অন্যায়?
ফাঁসি দিলে চুকেবুকে যাবে,
একজন ধর্ষণকারী
তার পরও নিরাপদ কি?
রাত করে বাড়ি ফেরা নারী।
বুঝে নিয়ে জনতার রায়, তড়িঘড়ি আইনসভায়
ধর্ষক সাবালক হোল,
নেমে এলো ষোলোর কোঠায়।
আড় চোখে ‘বস’ থেকে বাড়ি,
পণ্যের ‘সিনোনেম’ নারী
যে সমাজ সাবালক নয়,
ধর্ষণ সেখানেই হয়
পারবে না আইনের গুঁতো ,
বাঁধা হবে চিন্তার সুতো
বড়দের মতো যতো সাজো, সমাজটা নাবালক আজও।
একটা ভাবনার জন্য
তোমার জন্য পথ চেয়ে কখন যেন সময় থেমে যায়
বাসের ঠেলাঠেলি, বাজারের দরাদরি, মিছিলের স্লোগান
সব কিছু এসে মেশে দুপুর জড়ানো কবিতা খাতায়
পাতায় কখনও বারুদের গন্ধ, কখনও গঙ্গাকে ছোঁয়া ময়দানি
হাওয়া
কোথাও তুমি ভেজা চোখের লক্ষ্যহীন দৃষ্টি রাখ চিলেকোঠার
জানলায়
তোমার জন্য অপেক্ষায় কখন যেন সময় থেমে যায়
ধুলিকনার মত ভেসে থাকা নিঝুম দুপুরে ফেরিওলা ডেকে যায়
কবিতার হাত ধরে
তুমি জেগে থাক একগুচ্ছ ‘শব্দ’ হয়ে
এখন বৃষ্টি মাস
জল থইথই নীল আকাশে
জলের নীচে ঘাস
ফুটপাতে জল ছিটিয়ে
চলে ছুটন্ত এক বাস
ভাসছে থালা, বাটিও ভাসছে
এলোমেলো বসবাস
বিনিদ্র রাত পথে শুয়ে কাটে
এখন বৃষ্টি মাস।
আমার রবীন্দ্রনাথ
ঝড়ে
এলোমেলো স্বপ্ন রাতে পথে ছিলাম জেগে
কবিগুরু হাঁটছিলেন আমার আগে আগে
প্রণাম করে বলেছিলাম ‘কাটবে কবে রাত?’
স্মিত হেসে জবাব দিলেন আমার রবীন্দ্রনাথ
দেশকাল সব বদলে গেছে, অচেনা মানুষজন
মুর্তি, মালায় চাপা পড়ে গেছে ‘রবীন্দ্র দর্শন’
২৫ তারিখ... মাইক, মঞ্চ, নেতা-নেত্রী সব
এসব ছেড়ে অন্তরে কর ‘মানবতা উৎসব’।
এই কবিতার নাম নেই.......
প্রেমে হাবুডুবু রাসবিহারীর মোড়
তুমুল তর্কে সুমনের চাওয়া-পাওয়া
ভালবেসে শোনা পিট সিগারের সুরে
সাহস করে স্বরচিত গান গাওয়া।
সাইরেনও ছিল পূর্বরাগের লয়
খুঁজে তোলপাড় কালো সাহেবের বাড়ি
চলে গিয়েছিল ধুলো ওড়া স্কুল বাস
কব্জিতে ছিল নটা বেজে যাওয়া ঘড়ি
সাম্য মিছিল, ডোভার লেনের রাত
বইমেলা জুড়ে চন্দ্রবিন্দু আঁকা
নীরা তো এখনও আগের মতোই আছে
সুনীলের রাখা চেয়ারটা শুধু ফাঁকা
আজ ভালোবাসা মধ্য তিরিশ পার
তিলোত্তমা আজও উনিশেই আছে
দমদম ছোঁয় নিউইয়র্কের প্লেন
বেলা বোস ফেরে এই শহরের কাছে
প্রেম আজ এক বন্ধুত্বের নাম
বিশ্বাস তার আঙুল ধরে হাঁটে
ভালবাসা, এই শব্দের আশেপাশে
প্রিয় গানগুলি পাশাপাশি এসে বসে।
অরিন্দম চ্যাটার্জী
প্রথম প্রকাশ-'আজ ঘরে বাইরে'
স্বদেশ প্রেম............
কাকে বলে প্রেম আর কার নাম স্বদেশ
দেশ প্রেম জিলিপি? নাকি আগস্টে সন্দেশ?
প্রেম মানে ঠিক কি? খুঁজছি এখনও
দেশ মানে সীমারেখা , নাকি মানুষ কখনো সখনো?
দেশ প্রেম কি জমি দখল, নাকি জমি হীনের ঠাই?
রাষ্ট্র হোক বটের ছায়া, বাঁচুক সবাই
স্বদেশ প্রেম কি কামান বারুদ জলপাই আর খাকি
ভারত-পাক ক্রিকেট ম্যাচে দেশ প্রেম মাখি
কেউ স্বদেশের ধর্ম খোঁজে, কেউ বলে নিরপেক্ষ
দেশ প্রেমিক শাসক দল, নাকি বিরোধী পক্ষ?
দেশ মানে ওরাও কি, যারা বিদ্রোহী রঙে?
নাকি স্বদেশ প্রেম শুধু তাবেদারি ঢঙে
দেশ মানে কি একটা জমি, কাঁটা তারে ঢাকা?
নাকি দেশ সীমাহীন ভালবাসায় মাখা?
দেশ কি তৈরি কংক্রিটে ? চুন, বালি , ঘেঁস
দেশ আসলে মানুষগুলোই, মানুষ মানেই দেশ।
অরিন্দম চ্যাটার্জী
অরিন্দম চ্যাটার্জী
প্রথম প্রকাশ-'আজ ঘরে বাইরে'
একটি নাবালক ছেলে এবং ........
চিৎকারে বুক চেরা রাত, তারপর স্তব্ধতা নামে
যন্ত্রণা, রক্তের স্রোত, মৃত্যুর দেশে গিয়ে থামে
ছেলেটা কি ফিরে দেখেছিল? মৃতপ্রায় মেয়েটার দিকে
এত ঘৃণা এলো কোথা থেকে? ধর্ষণ নাবালক চোখে
ধর্ষক নাবালক তাই, সাত খুন মাফ হওয়া চাই
রাজপথে ওড়ে সাদা খই, মুখ ঢাকে আইনের বই
পথে ছিলে দেশ একসাথে, চোখ ভিজেছিল কান্নায়
নির্ভয়া পেল কি বিচার? এভাবে কি থামে অন্যায়?
ফাঁসি দিলে চুকেবুকে যাবে, একজন ধর্ষণকারী
তার পরও নিরাপদ কি? রাত করে বাড়ি ফেরা নারী।
বুঝে নিয়ে জনতার রায়, তড়িঘড়ি আইনসভায়
ধর্ষক সাবালক হোল, নেমে এলো ষোলোর কোঠায়।
আড় চোখে ‘বস’ থেকে বাড়ি, পণ্যের ‘সিনোনেম’ নারী
যে সমাজ সাবালক নয়, ধর্ষণ সেখানেই হয়
পারবে না আইনের গুঁতো , বাঁধা হবে চিন্তার সুতো
বড়দের মতো যতো সাজো, সমাজটা নাবালক আজও।
অরিন্দম চ্যাটার্জী
প্রথম প্রকাশ -'আজ ঘরে বাইরে' পত্রিকা।
শীতের রাত শেষে........
শীতের রাত শেষে, কুয়াশারা ফিরে যাবে বাড়ি
শিশিরেরে শেষ ফোঁটা নিয়ে ময়দানে চলে কাড়াকাড়ি
শীতের রাত শেষ, মনখারাপ সোয়েটার কোট
শীত যাচ্ছে চলে, শুধু হাসে চেনা এক ঠোঁট
ঝুপড়িতে নানা আঁকিবুঁকি, ফুটো দিয়ে শীত মারে উঁকি
প্লাস্টিক জড়িয়ে নিয়ে গায়ে, সাড়া রাত একা কেঁপে যায়।
শীতের রাত শেষ, হাসি হাসি মুখ ফুটপাত দঙ্গলে
‘ ফুট ফুট ফুট ফুরররর!এবার শীতেও বেঁচে গেলাম’, ক্ষ্যাপা ওঠে বলে।
অরিন্দম চ্যাটার্জী
প্রথম পাঠ-আকাশবানী এফ এম রেনবো-"কবিতা ক্লাব"
পুরানো ছবিপ্রথম পাঠ-আকাশবানী এফ এম রেনবো-"কবিতা ক্লাব"
পুরানো ছবি, চোখের কোনে হঠাৎ করে বৃষ্টি
মনের খাতার ফাঁকে রাখা খুব চেনা এক দৃষ্টি
ঘুম ভেঙে যেই জাগল সকাল, রাত জেগে থাকা স্মৃতি
ঝাপসা হওয়া হাসির কোনে জন্মদিনের প্রীতি
অ্যালবামটায় জমেছে ধুলো, তারই পাতার ফাঁকে
পুরানো ছবি আড্ডা মারে চেনা পথের বাঁকে
কারো কারো নাম আজ নেই মনে, কেউ আছে মনে অল্প
পুরানো ছবির অ্যালবামে জমা, ভুলে যাওয়া সব গল্প।
প্রথম পাঠ-আকাশবানী এফ এম রেনবো
প্রথম পাঠ-আকাশবানী এফ এম রেনবো
*****************
জননী জন্মভূমি
------------------
মৃন্ময়ী থেকে প্রাণময়ী হও
চোখ মেলে দেখ তুমি।
দড়ি জড়িয়েছে কৃষকের দেহ
শুকনো চাষের জমি।
পতাকার মত চঞ্চল হও
বাঙময় হও তুমি।
বুকে কাঁটাতার, তবু জেগে ওঠো
জননী জন্মভূমি।
প্রথম পাঠ-আকাশবানী এফ এম রেনবো
প্রথম পাঠ-আকাশবানী এফ এম রেনবো
***************
তোমার জন্য
তোমার জন্য পথ চেয়ে কখন যেন সময় থেমে যায়
বাসের ঠেলাঠেলি, বাজারের দরাদরি, মিছিলের স্লোগান
সব কিছু এসে মেশে দুপুর জড়ানো কবিতা খাতায়
পাতায় কখনও বারুদের গন্ধ, কখনও গঙ্গাকে ছোঁয়া ময়দানি হাওয়া
কোথাও তুমি ভেজা চোখের লক্ষ্যহীন দৃষ্টি রাখ চিলেকোঠার জানলায়
তোমার জন্য অপেক্ষায় কখন যেন সময় থেমে যায়
ধুলিকনার মত ভেসে থাকা নিঝুম দুপুরে ফেরিওলা ডেকে যায়
কবিতার হাত ধরে তুমি জেগে থাক একগুচ্ছ ‘শব্দ’ হয়ে।
প্রথম পাঠ-আকাশবানী এফ এম রেনবো
************
প্রথম পাঠ-আকাশবানী এফ এম রেনবো-'কবিতা ক্লাব'প্রথম পাঠ-আকাশবানী এফ এম রেনবো
************
শরৎ তোমার
শরৎ তোমার স্বপ্ন দেখেছি শিউলি ফুলে
খোঁপায় ছিল ছাতিম, দোলনচাঁপা কানের দুলে
শরৎ তুমি ছন্দ- ছড়া ,গ্রামের বাড়ি ছুটির মাঝে
সন্ধ্যে বেলায় আজও শরত শাপলা বিজের খই ভাজে।
শরৎ তোমার গন্ধ পেয়েছি শারদীয়ার পাতায় পাতায়
পূজার ছুটির আগেই দুর্গা শেষ পাতার অঙ্ক খাতায়
শরৎ তুমি আগেও ছিলে, জানি তুমি এখনও আছো
ফাইল বন্দি কাজের ফাঁকে, শরৎ আমি তোমায় খুজছি আজও।
এখন বৃষ্টি মাস
জল থইথই নীল আকাশে
জলের নীচে ঘাস
ফুটপাতে জল ছিটিয়ে
চলে ছুটন্ত এক বাস
ভাসছে থালা, বাটিও ভাসছে
এলোমেলো বসবাস
বিনিদ্র রাত পথে শুয়ে কাটে
এখন বৃষ্টি মাস।
(For FM Rainbow)
অরিন্দম চ্যাটার্জী
আমার রবীন্দ্রনাথ
ঝড়ে এলোমেলো স্বপ্ন রাতে পথে ছিলাম জেগে
কবিগুরু হাঁটছিলেন আমার আগে আগে
প্রণাম করে বলেছিলাম ‘কাটবে কবে রাত?’
স্মিত হেসে জবাব দিলেন আমার রবীন্দ্রনাথ
দেশকাল সব বদলে গেছে, অচেনা মানুষজন
মুর্তি, মালায় চাপা পড়ে গেছে ‘রবীন্দ্র দর্শন’
২৫ তারিখ... মাইক, মঞ্চ, নেতা-নেত্রী সব
এসব ছেড়ে অন্তরে কর ‘মানবতা উৎসব’।
(For FM Rainbow)
অরিন্দম চ্যাটার্জী
পান্তা ভাতের পাঁচালি
টিং টিঙে বেঁটে খাটো নরহরি দাস
পোলাপান নিয়ে তার চেতলায় বাস,
ভাগ চাষা ছিল হরি বটখালি গ্রামে
জমি গেছে তলিয়ে ভাঙনের টানে।
চেতলায় নরহরি রিক্সা চালায়,
পান্তায় দুইবেলা পেটটা ভরায়।
কাঁচা লঙ্কা আর পেয়াজের সাথে,
নরহরি খায় রোজ চেটেপুটে পাতে।
পাড়ার এক নেতা, অগতির গতি,
ভয়ে ভয়ে নরহরি যায় তার প্রতি।
নেতাকে জানায় হরি অতি নীচ সুরে,
পারছিনা খেতে আর ঠিক পেট পুরে।
কুঁচকিয়ে ভুরু জোড়া চশমার ফাঁকে
তাকালেন ছোট নেতা হরির দিকে,
দুটাকা কেজি দরে পাচ্ছিস চাল
এর পরেও কেন তোর কাটেনা আকাল?
নরহরি জোড় হাতে করে নিবেদন,
মিনমিনে সুরে করে নীরব রোদন।
পান্তার সাথে খাই পেঁয়াজ এক খান,
আশি টাকা কিলো দরে পেঁয়াজের দাম।
ব্যস্ত নেতার কানে ছিল মোবাইল
ভিড় ছিল ঘিরে তার কাজের টেবিল,
নেতার চেলা বলে , বাড়ি ফিরে যা
পেঁয়াজ না পেলে হরি পেঁয়াজ কলি খা!
অরিন্দম চ্যাটার্জী